• আজ ১লা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিরাজদিখানে ড্রেজিংয়ের রমরমা বানিজ্য, ম্যানেজ করে ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ!

| নিউজ রুম এডিটর ৬:৪৬ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৪ মুন্সীগঞ্জ

 

সিরাজদিখান প্রতিনিধিঃ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে তিন ফসলি জমি, সরকারী খাল, পুকুর ও ডোবা নালা ভরাটের হিড়িক পরেছে। সিরাজদিখান উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে চলা ইছামতী নদীতে বালুবাহী বাল্কহেডের মাধ্যমে তিন ফসলি জমি, সরকারী খাল, পুকুর ও ডোবা নালা ভরাট চলছে অনেকটা জোড়ালো ভাবেই। উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে ড্রেজিংয়ের এমন কর্মযজ্ঞ লক্ষ করা যাচ্ছে। দিন রাত ২৪ ঘন্টা বালুবাহী এসব বাল্কহেড বোঝাই করে বালু এনে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ফসলী জমি ভরাটের কারণে দিন দিন ফসলি জমির সংখ্যা কমার পাশাপাশি সরকাী খাল দখলে হচ্ছে ক্রমশই।জানা যায়,স্থানীয়  রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট দিন রাত ২৪ ঘন্টা বালুবাহী বাল্কহেড এনে ইছামতী নদীর তীরে নোঙর করে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ফসলি জমি ভরাটসহ বালু মহল তৈরি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। উপজেলার যেসব স্থানে বালু মহল গড়ে তোলা হয়েছে সেসব বালু মহলের বৈধ কোন কাগজ পত্র নেই বললেই চলে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ড্রেজিংয়ের অবৈধ কর্মযজ্ঞ চলছে অনেকটা জোড়ালো ভাবেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার রশুনিয়া, ইছাপুরা, বয়রাগাদী,লতব্দী ও মালখানগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার জনসাধারণের চলাচলের সরকারী রাস্তার উপর দিয়ে, রাস্তা এপার ওপার করে কেটে ও রাস্তার নিচ দিয়ে বোরিং করে ড্রেজিংয়ের পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে ফসলি জমি ভরাট করা হচ্ছে। এতে করে একদিকে জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রশাসনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্বিঘ্নে ফসলি জমি ভরাটের এমন কর্মযজ্ঞ চললেও প্রশাসনকে অনেক ক্ষেত্রেই নিরব ভূমিকায় থাকতে দেখা যাচ্ছে। ড্রেজার মালিকদের অনেকেই বলছেন তারা ম্যানেজ করেই ড্রেজিংয়ের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে  ড্রেজিংয়ের পাইপলাইন অপসারণ করলেও প্রশাসন যাওয়ার পর পুনরায় পাইপলাইন স্থাপন করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।অপরদিকে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পূর্ব সিরাজদিখান উপজেলায় যেসকল এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ড্রেজিংয়ের ব্যবসা পরিচালনা করেছে সেসব ড্রেজিংয়ের ব্যবসা সরকার পতনের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা দখলে নিয়ে ড্রেজিংয়ের ব্যবসা বৃদ্ধি করে নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মর্মে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন অবৈধ ড্রেজারের ব্যবসার কথা স্বীকার করে বলেন, তিন ফসলি জমিন বালু দিয়ে আমরাই একা ভরাট করছি না । অনেক কোম্পানি আছে তারাও ভরাট করছে। এ বিষয় ইউপি সদস্য শাহিন হাওলাদার বলেন, ভালো ব্যবসা এখন নাই, সব বন্ধ হয়ে গেছে, এমনকি এলাকার ছেলে পেলে সব বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের এদিকে কোন তিন ফসলি জমি নেই যা ভরা হচ্ছে তা হলো, সামান্য ডোবা নালা। আরো এক ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, আমার ড্রেজার বন্ধ হয়ে গেছে ৫ তারিখের আগেই। গন্ডগোল লাগার আগেই আমার ড্রেজারটি মুল মালিক নিয়ে গেছে। ড্রেজার ব্যবসায়ী পিন্টু বলেন, ৫ই অগাষ্ট সরকার পরিবর্তন হওয়ায় আমাদের ডেজার বন্ধ। আমরা যে সময় ড্রেজার চালাতাম সেই সময় সিরাজদিখান থানার এস.আই মাইনুদ্দিনকে মাসোয়ারা দিয়ে (নগদ) ড্রেজার চালিয়েছি। এখন আমাদের সময় ভালো না তাই আপাতত বন্ধ। বর্তমানে যে যার মতো করে ড্রেজার চালু রাখছেন। ড্রেজার ব্যবাসয়ী অপু মাঝি বলেন, আমার হাতে পুলিশকে কোন টাকা-পয়সা দেই নাই, তবে কাজ করার সুবাদে কন্ট্রাক্টার যারা আছেন তারা পুলিশ প্রশাসনকে টাকা দিয়ে মিলতাল করে কাজ চালু রাখতেন। আমরা ছোট ব্যবসায়ী আমাদের তেমন কিছু বলার থাকে না। বর্তমানে আমাদেরটা বন্ধ আছে। কেন বন্ধ আছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বর্তমানে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। তাই আমাদের টা বন্ধ। ড্রেজার ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান মৃধা বলেন আমার একটা ড্রেজার ছিলো সেটা বন্ধ করে দিয়েছি। সরকার পরিবর্তনের হাওয়ায় আমার ড্রেজার বর্তমানে বন্ধ। কি করব? আমার একটি ড্রেজার এর সাথে আরো পাঁচটি ড্রেজার প্রশাসন ধরলেই সব আমার সমাধান করতে হয়। থানা পুলিশ সাংবাদিক সকলকে ম্যানেজ করে আমি ড্রেজার চালিয়েছিলাম। এখন আর আমার পক্ষে ছয়টি ডেজার আমার নামে চলবে, আমি সব ম্যানেজ করতে পারতেছিনা তাই আমারটা আমি গুটিয়ে নিয়েছি। এ বিষয়ে সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ জানান, পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশ প্রশাসন না থাকায় আইনী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।