• আজ ১৪ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সবুজ হারাচ্ছে দেশ: নিঃশ্বাসে মৃত্যুর ছায়া!

| নিউজ রুম এডিটর ২:১৬ অপরাহ্ণ | মে ২৭, ২০২৫ ফিচার

 

মো: সাইফুল্লাহ খাঁন, (সাংবাদিক ও কলামিস্ট) :

বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর জনবহুল দেশ। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বায়ু, পানি, মাটি, শব্দসহ প্রায় সব পরিবেশ উপাদানই আজ দূষিত। পরিবেশ দূষণ কেবল প্রকৃতি নয়, মানুষের স্বাস্থ্যের উপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। সময় এসেছে, সচেতনতা ও কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে এই সংকট নিরসনে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের।

বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের প্রধান ধরন ও উৎস:

১. বায়ু দূষণ:

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্বের অন্যতম বায়ু দূষিত শহর। যানবাহনের কালো ধোঁয়া, ইটভাটা, শিল্পকারখানার নির্গত ধোঁয়া ও নির্মাণকাজের ধুলাবালি এই দূষণের মূল কারণ। শীতকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

২. পানি দূষণ:

শিল্পকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, হাসপাতালের আবর্জনা, কৃষিজ কীটনাশক ও স্যুয়ারেজের পানি সরাসরি নদী ও জলাশয়ে ফেলার কারণে পানির গুণমান মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ নদীর পানিতে জীব বৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে।

৩. মাটি দূষণ:

বিভিন্ন স্থানে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পলিথিন, প্লাস্টিক ও ভারী ধাতব বর্জ্য মাটিতে পুঁতে ফেলার কারণে মাটি তার উর্বরতা হারাচ্ছে। কৃষিজ উৎপাদন ও মানব স্বাস্থ্যে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

৪. শব্দ দূষণ:

যানবাহনের হর্ণ, নির্মাণকাজ, মাইক ব্যবহারের ফলে শহরাঞ্চলে শব্দ দূষণ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঢাকা শহরের অনেক এলাকায় শব্দমাত্রা প্রতি দিনে ৯০ ডেসিবেলেরও বেশি, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সীমার অনেক উপরে।

পরিবেশ দূষণের প্রভাব:

স্বাস্থ্যঝুঁকি: ফুসফুসের রোগ, হাঁপানি, ত্বকের রোগ, ক্যানসার, শ্রবণশক্তি হ্রাসসহ বহু জটিল রোগ বাড়ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন: কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি: দূষিত পানি ও মাটি প্রাণীকুলের আবাস ধ্বংস করছে, হারিয়ে যাচ্ছে বহু প্রজাতি।

খাদ্য সংকট: মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ায় কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।

সমাধানে করণীয়:

১. আইন প্রয়োগ:

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ ও পানি আইন ২০১৩–এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দূষণকারী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

২. বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার:
ইটভাটাগুলোতে জিগজ্যাগ বা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বাধ্যতামূলক করা এবং জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন।

৩. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা:

পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও কম ক্ষতিকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক পদ্ধতি চালু করতে হবে। হাসপাতাল ও শিল্পকারখানার বর্জ্য শোধনাগার (Effluent Treatment Plant) স্থাপন বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৪. গাছ লাগানো ও সবুজায়ন:

প্রতিটি শহরে পরিকল্পিত সবুজায়ন, ছাদবাগান ও গাছ লাগানোর কার্যক্রমে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ সমন্বয় করতে হবে।

৫. সচেতনতা বৃদ্ধি:

স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে পাড়ায় পাড়ায় পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। মিডিয়া, এনজিও এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে।

পরিবেশ দূষণ শুধু একটি দেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সংকট। তবে বাংলাদেশে এ সমস্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের টিকে থাকার স্বার্থেই এখনই পরিবেশ রক্ষার পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনের প্রয়োগ, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জনসচেতনতা একত্রে কাজ করলে এই দূষণ রোধ সম্ভব। এক্ষেত্রে প্রতিটি নাগরিককে হতে হবে দায়িত্বশীল ও সচেতন।