• আজ ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরকীয়া যেন আরেক মহামারী!

| নিউজ রুম এডিটর ৭:৩৬ অপরাহ্ণ | মে ২২, ২০২২ ফিচার

তামান্না ইসলাম ঃ যুগে যুগে পৃথিবীতে অনেক মহামারী এসেছে। কলেরা, বসন্ত, স্পেনিশ ফ্লু, প্লেগ পুরো পৃথিবীতে তান্ডব চালিয়েছে। অসংখ্য মানুষ মারা গেছে, নগর, বন্দর, দেশ, গ্রামের পর গ্রাম উজার হয়েছে। বর্তমানে করোনা ভাইরাস পৃথিবীতে তার তান্ডবলীলা চালাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের পাশাপাশি আরেকটি মহামারী আমাদের সমাজকে কলুষিত করছে, সামাজিক বন্ধনকে নষ্ট করে দিচ্ছে, সামজিক অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। এই ভাইরাসের নাম পরকীয়া।

পরকীয়া বর্তমানে সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। স্বামী–স্ত্রীর মতের অমিল, স্বামীর আর্থিক সংহতি অনুযায়ী স্ত্রীর জীবন পরিচালনা না করা, স্ত্রীর সন্তান না হওয়া, সামাজিক পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রভাব, প্রাশ্চাত্য সংস্কৃতির আগ্রাসন ইত্যাদি কারণে সমাজে পরকীয়ার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের তান্ডব এই মহামারীকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নারীর প্রতি পারিবারিক নির্যাতন, অর্থের জন্য চাপ প্রয়োগ, শারীরিক আঘাত, সামাজিক অবক্ষয়, তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার, অতিরিক্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি পরকীয়ার হারকে বৃদ্ধি করেছে। ফলশ্রুতিতে, বিবাহ বিচ্ছেদের হার এবং পারিবারিক ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও পরকীয়ার বিস্তার এখন প্রবল। রাজধানী ঢাকায়ই দিনে ৩৮টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। এ হিসাবে প্রতি ৩৮ মিনিটে একটি দাম্পত্য সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে । গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতি মাসে ৯৯টি বিচ্ছেদ বেড়েছে ( সূত্রঃ কালের কন্ঠ)।

পরকীয়ার মহামারীতে দেশের সামাজিক কাঠামোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পরকীয়ার ফলস্বরুপ, মা কর্তৃক সন্তানকে হত্যা, স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে হত্যা, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে হত্যা এখন নিত্যনৈমিত্যিক ঘটনা। বাবা- মায়ের বিচ্ছেেদের ফলে সন্তানের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। সন্তানদের মনোজগতে নেতিবাচক পরিবর্তন, সামাজিকভাবে হেয় হওয়াসহ অসংখ্য সমস্যার মধ্য দিয়ে তারা বেড়ে উঠছে যা ভবিষ্যতে দেশের আর্থসামাজিক পরিবর্তনে নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে। পরকীয়া থেকে সমাজকে বাঁচাতে হলে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সমাজের ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষাকে সম্প্রসারিত করতে হবে, ধর্মীয় দৃষ্টিতে পরকীয়ার ফলাফল এবং এর ভয়াবহতা কী সেটি প্রচার করতে হবে, পরকীয়ার শাস্তি হিসেবে আইন জারি করতে হবে এবং তার কঠোর প্রয়োগ ঘটাতে হবে, পরকীয়ায় আসক্ত স্বামী বা স্ত্রীকে মনোবিজ্ঞানীর মাধ্যমে কাউন্সিলিং করতে হবে, সম্পর্ক কীভাবে উন্নতি করা যায় এব্যাপারে মনোবিজ্ঞানীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে, পরকীয়াকে কীভাবে নিরুৎসাহিত করা যায় এবং সমাজ থেকে নির্মূল করা যায় গণমাধ্যমকে এই ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। পরকীয়া মুক্ত হোক সমাজ এই প্রত্যাশা কাম্য।