• আজ ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
 একটি পক্ষ সন্ত্রাস ও চাঁদবাজদের লালন করে ক্ষমতায় যেতে চায়: নাহিদ ইসলাম | চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে হত্যা যুবদল নেতার, ভিডিও ভাইরাল | পানিহাটা সীমান্তে ১০ বাংলাদেশীকে বিএসএফের পুশইন | ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার | কুড়িগ্রামে তিস্তায় নিখোঁজের একদিন পর শিশুর মরদেহ উদ্ধার | বাংলাদেশের ওপর ভারতের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব নির্ভরশীল: নাহিদ ইসলাম | ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে ট্রাম্প-নেতানিয়াহু | চট্টগ্রামে প্রথম দুই ব্যক্তির শরীরে জিকা ভাইরাস শনাক্ত | তাজিয়া মিছিলে হাজারো মানুষ, সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী | আজ ১০ই মহররম, পবিত্র আশুরা |

গ্রামীণ বনাম নগর সমাজ – দৃষ্টিভঙ্গির দ্বন্দ্বে বদলে যাচ্ছে সমাজচিত্র

| নিউজ রুম এডিটর ২:১৯ পূর্বাহ্ণ | মে ১৮, ২০২৫ ফিচার

 

মো: সাইফুল্লাহ খাঁন: সমাজ গঠনের ভিত্তি হলো মানুষের চিন্তা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় একরকম থাকে না। মানুষের বাসস্থান, পরিবেশ, শিক্ষা, আর্থসামাজিক অবস্থা ও প্রযুক্তিগত সংস্পর্শ—এসব কিছু তার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ ও নগর সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে বিস্তর ফারাক লক্ষ করা যায়, যা শুধু জীবনযাত্রার ভিন্নতা নয়, বরং চিন্তা ও মূল্যবোধের পার্থক্যকেও স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

গ্রামীণ সমাজ: সহজ জীবন, সজীব মানবিকতা

গ্রামীণ সমাজে মানুষের জীবন সাধারণত সহজ, ধীরস্থির ও স্বাভাবিক নিয়মে চলে। এখানকার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবারকেন্দ্রিক, পরস্পরের উপর নির্ভরশীল এবং ঐতিহ্যনির্ভর। সমাজে একজন মানুষ অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে আসে, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়।

সম্পর্কনির্ভর সমাজ: গ্রামের মানুষ একে অপরকে চেনে, জানে। আত্মীয়-প্রতিবেশীদের মধ্যে আন্তরিকতা ও সহমর্মিতা দৃঢ়।

ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধে প্রভাবিত: ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং সামাজিক মূল্যবোধ এখানে এখনো শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে রেখেছে।

সংরক্ষণশীলতা: নতুন চিন্তা, পরিবর্তন বা ব্যতিক্রমধর্মী কিছুকে সহজে গ্রহণ করতে চায় না। এ কারণে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অনেক সময় বাধা সৃষ্টি হয়।

নারীর অবস্থান: এখনও অনেক ক্ষেত্রে নারীকে গৃহস্থালীর দায়িত্বে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।

নগর সমাজ: গতিময় জীবন, ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা

নগর সমাজে দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে দ্রুতগতির জীবন, প্রতিযোগিতা ও ব্যক্তিস্বার্থের উপর ভিত্তি করে। এখানে মানুষ অনেক বেশি আত্মনির্ভরশীল, কিন্তু একই সাথে একাকীত্বগ্রস্ত।

চাকুরি-ব্যবসা ও ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক জীবন: সময়ের অভাবে সামাজিক সম্পর্ক শিথিল। ব্যক্তিগত অগ্রগতির দিকে মনোযোগ বেশি।

প্রযুক্তির প্রভাব: নগরের মানুষ প্রযুক্তি, গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া দ্বারা প্রভাবিত; ফলে দৃষ্টিভঙ্গি আধুনিক, কিন্তু অনেক সময় ভোগবাদী।

নারীর উন্নয়ন ও স্বাধীনতা: কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ তুলনামূলক বেশি। তবে একই সাথে হয়রানি, অবিচার ও চ্যালেঞ্জও প্রচুর।

ধর্ম ও মূল্যবোধ: ব্যক্তিগত ধর্মাচরণ থাকলেও সামাজিক বা পারিবারিক পর্যায়ে ধর্মীয় চর্চা তুলনামূলক কম।

দৃষ্টিভঙ্গির সংঘাত: সামাজিক টানাপোড়েনের উৎস

এই দুই ভিন্ন সমাজব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবধান আমাদের জাতীয় পরিচয় ও উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে দ্বিধাবিভক্ত করে তোলে। নগর সমাজের আধুনিকতা যখন গ্রামে প্রবেশ করে, তখন শুরু হয় সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব। তরুণ প্রজন্ম গ্রাম ছেড়ে নগরের প্রতি আকৃষ্ট হয়, কিন্তু নগর তাদের জন্য সবসময় নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে পারে না। এতে তারা হয়ে পড়ে দিকভ্রান্ত।

সমন্বয়ের প্রয়োজন: সাম্য ও ভারসাম্যের সমাজ

বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রয়োজন গ্রামীণ সমাজের মানবিকতা ও নগর সমাজের অগ্রগতির মধ্যে সঠিক সমন্বয়।

গ্রামে প্রযুক্তি, শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াতে হবে।

শহরে মানবিকতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক সংবেদনশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে।

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সাংস্কৃতিক ও নৈতিক শিক্ষা জোরদার করতে হবে, যেন দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়নের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ হয়।

নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।

গ্রামীণ ও নগর সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হলেও উভয়ের লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক ও উন্নয়নমুখী সমাজ নির্মাণ। সচেতনতা, শিক্ষা ও ধর্মীয় নৈতিকতা এই পার্থক্য ঘোচাতে পারে। শহরের প্রযুক্তি আর গ্রামের হৃদয়—এই দুইয়ে মিললেই গড়ে উঠবে একটি ভারসাম্যপূর্ণ, আলোকিত ও কল্যাণকর বাংলাদেশ।