

মধ্যপাড়া খনি
মাহফিজুল ইসলাম রিপন দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলায় অবস্থিত দেশের একমাত্র ভূ-গর্ভস্থ পাথরখনি মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার স্বার্থে উৎপাদন খরচের চেয়ে গড়ে প্রতিটন পাথর ৫০০ টাকা কমে (লোকসানে) বিক্রি করা হচ্ছে। ভারত ও ভুটান থেকে আমদানী করা পাথরের চেয়ে মধ্যপাড়ার পাথরের মূল্য বেশী হওয়ার পরও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য পাথরের বিক্রয়মূল্য বাড়ানো যাচ্ছে না।এরপরও পাথর বিক্রি হচ্ছে না।
ধারদেনাকরেঠিকাদারেরবিলওকর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা দিতে হচ্ছে। দেশে প্রতিবছর প্রায় দুই কোটি ১৬ লাখ মে.টন পাথরের চাহিদা রয়েছে। অথচ বছরে মধ্যপাড়ায় উৎপাদিত প্রায় ১৫ লাখ মে.টন পাথরই বিক্রি হয় না। এর অন্যতম কারণ সঠিক বিপনন ব্যবস্থাপনার অভাব। উৎপাদনে গতি বাড়লেও গত দুইবছর ধরে তা বিক্রিতে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি তৎকালিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
গত সেপ্টেম্বর মাসে মোঃ ফজলুর রহমান খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে যোগদান করে পাথর বিক্রিতে গতি ফেরানোর চেস্টা করছেন। খনির ১২টি ইয়ার্ডে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ ৬০ হাজার টন পাথর মজুদ রয়েছে। দ্রুত পাথর বিক্রির গতি না বাড়লে স্থানাভাবে কিছুদিনের মধ্যে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
জানা গেছে, পাথর আমদানীর ক্ষেত্রে প্রতিটন পাথরের বেইজ ভ্যালু ১২-১৩ ডলার নির্ধারণ করে শুঙ্কারোপ করা হয় বিধায় আমদানি খরচ কম হয়। সেক্ষেত্রে পাথরের বেইজ ভ্যালু বৃদ্ধি করে শুঙ্কায়ন করা হলে আমদানি মূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং প্রতিযোগিতামুলক বাজারে মধ্যপাড়ার পাথর বিক্রি করা সহজ হবে। পূর্বে শুধুমাত্র বিক্রিত পাথরের উপর গড়ে ২.৫ শতাংশ রয়্যালটি নির্ধারিত ছিল। ৩১ জানুয়ারী ২০১৯ থেকে প্রতিটন ২২ ডলার মূল্য নির্ধারণ করে তার উপর ২.৫ শতাংশ রয়্যালটি প্রদান করা হতো খনিজ সম্পদ উন্নয়ন বুরোকে। বর্তমানে ৫ শতাংশ রয়্যালটি দিতে হয়। এছাড়া পাথরের বিক্রয় মূল্যের উপর এআইটি ও সিটিভ্যাট আরোপ করায় পাথরের উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
তাছাড়া, বিস্ফোরক আমদানির সিটিভ্যাট ১০০ শতাংশ, স্পেয়ার ও কনজ্যুমেবল আমদানির সিটিভ্যাট ৫০ শতাংশ, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির সিটিভ্যাট ৭.৫-৩৫ শতাংশ, উৎপাদন ঠিকাদারকে পরিশোধিত অর্থের উপর কর ৫ শতাংশ ও মূসক ৫.৫ শতাংশ মওকুফ না করায় পাথরের উৎপাদন খরচ বেশী পড়ছে। উপরন্তু বিস্ফোরকের জন্য আমদানি করা প্রিলভ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের উপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ সিটিভ্যাট আরোপ করায় উৎপাদন খরচ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া, চুক্তিতে ঠিকাদারের বিল পেমেন্টের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলার রেট বিনিময় হার ফিক্সড থাকায় ডলার রেট বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু আমদানিকৃত পাথরের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য পাথরের বিক্রয়মূল্য বাড়ানো যাচ্ছে না।
সার্বিক পরিস্থিতিতে মজুদকৃত পাথর দ্রুত বিক্রি ও স্টক ইয়ার্ড খালি করে উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার স্বার্থে উৎপাদন খরচের চেয়ে গড়ে আনুমানিক প্রতিটন পাথর ৫০০ টাকা কমে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে এমজিএমসিএল আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে খনি কর্তৃপক্ষ।
সুত্রমতে, বর্তমানে সরকারের নতুন নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন না হওয়া, চলমাণ নির্মাণ প্রকল্পসমূহের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ আত্মগোপনে থাকা, চলমান নির্মাণ প্রকল্পসমূহের অর্থ ছাড় না হওয়া (রেল, সওজ, পানি সম্পাদ, এলজিইডি) এবং আমদানিকৃত পাথরের ট্যারিফ ভ্যালু ও শুল্ক কম হওয়ায় প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে বলে এমজিএমসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোঃ ফজলুর রহমান জানান-দীর্ঘদিনের সমস্যা রাতারাতি সমাধান হবে না। তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর গত সাড়ে তিনমাসে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা সিটি করপোরেশনসহ প্রায় ৩০টি সরকারি-বেসরকারি-প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে গিয়েছেন, কর্ণধারদের সাথে বৈঠক করেছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ক্রেডিটে প্রায় আড়াই লাখ টন ব্যালাস্ট নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। ব্যালাস্ট ও বোল্ডার নিয়ে তিনি সমস্যায় পড়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২৫ মে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়।c ২০১৪ সাল থেকে খনির উৎপাদন ও রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে বেলারুশের জেএসসি ট্রেস্ট সকটোস্ট্রয় ও দেশীয় একমাত্র মাইনিং কাজে অভিজ্ঞ প্রতিষ্টান জার্মানিয়া করপোরেশন লিমিটেড নিয়ে গঠিত জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম(জিটিসি)। ইউরোপিয়ান প্রকৌশলীদল ও দক্ষ খনি শ্রমিক দিয়ে পুরোদমে পাথর উত্তোলন কাজ চলছে।